UUPTWA গভঃ বডির সফল বর্ধিত সভায় গৃহিত হল নতুন কমিটি,তৈরী হল আগামী আন্দোলনের নবতম রূপরেখা

 

UUPTWA গভঃ বডির সফল বর্ধিত সভায় গৃহিত হল নতুন কমিটি,তৈরী হল আগামী আন্দোলনের নবতম রূপরেখা 



গৌতম সাহা, বর্ধমানঃ 

বিগত ১০ মাস ধরে ভারতবর্ষ তথা পৃথিবী করোনা মহমারীর করাল গ্রাসে বিধ্বস্ত। ইতিমধ্যে গোটা দুনিয়ায় কয়েক লক্ষ মানুষকে আ মরা হারিয়েছি। ভারতবর্ষে কমবেশী দেড় লক্ষ মানুষ অসহায় মৃত্যু বরণ করেছেন। গত মার্চ মাস থেকেই দেশে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। স্তব্ধ হয়ে যায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন। এই অবস্থায় সমস্ত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের ডালি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন উস্থিয়ানরা। 

কিন্তু বঞ্চনার বিরুদ্ধে UUPTWA এর লাগাতার আ ন্দোলনে ভাটা পড়ে। উল্লেখযোগ্য বিষয় পশ্চিম বঙগের কমবেশী দুলক্ষ প্রাথমিক শিক্ষকদের সর্বভারতীয় বেতন PRT Scale পাবার জন্য বিগত তিন বছর ধরে লাগাতার আ ন্দোলন করে আ সছেন UUPTWA । আংশিক সাফল্য পাওয়া গেলেও বেশ কিছু নতুন সমস্যা দেখা দেয়। তাই করোনা আ বহাওয়ায় সেই আ ন্দোলনের ক্ষনিক যবনিকা ঘটে এবং সাংগাঠনিক কমিটিতে নানা মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। 




সমস্ত মতানৈক্য পাশ কাটিয়ে কমিটির সদস্য- সদস্যাবৃন্দরা গত ২৬ ও ২৭ শে ডিসেম্বর পূর্ব বর্ধমানে গভঃ বডির বর্ধিত সভায় মিলিত হন যেটি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো, গঠন করা হলো নতুন কমিটি, নির্বাচিত হলেন নতুন সম্পাদক, এছাড়াও গৃহিত হয় আ গামী আ ন্দোলনের নবতম রূপরেখা। সর্বসম্মতিক্রমে নবনিযুক্ত সম্পাদক হলেন ভাস্কর ঘোষ মহাশয়, প্রধান উপদেষ্টা হলেন মাননীয় ডঃ উদয়ন গৌতম, সহঃ সম্পাদক হলেন তন্ময় ঘড়ুই মহাশয়। সভাপতি হিসাবে পুনঃ নিযুক্ত হলেন সন্দীপ ঘোষ মহাশয়, সহঃ সভাপতি হলেন অরুন দাস ও দেবাশীষ দাস মহাশয়।কোষাধ্যক্ষ হিসাবে পুনঃ নির্বাচিত হলেন মাননীয়া নাফিসা মেহমুদ। কমিটির অন্যান্য সদস্য- সদস্যারা হলেন যথাক্রমে চন্দন চাটার্জি,রণজিৎ পন্ডা, সবিতা কুন্ডু, নির্ঝর কুন্ডু ও দেবাশীষ ব্যানার্জী। 



উক্ত মিটিং এ পূর্বতম সম্পাদিকা মাননীয় পৃথা বিশ্বাস কে তার অনশন পরবর্তী শারীরিক অসুস্থতার কারণে ক্ষনিক অব্যহতি দেওয়া হয়। এই মিটিং এ নতুন আ ন্দোলনের রূপরেখা গৃহিত হয়।মূলত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবী হলো যথা- 

১)গতবছর ২৬/০৭/১৯ তারিখ সরকারী G.O এর পরিপ্রেক্ষিতে বেতন কাঠামোর যথাযত ভাবে সংশোধন এবং এই অর্ডারটির ক্লারিফিকেশন,১৮ বছর ২০ বছরের সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে হওয়া বঞ্চনার মুক্তি।সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে জুনিয়র শিক্ষকদের বেতন সমান হওয়া অদ্ভুত নিয়মের পরিবর্তন করা। 

২)করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বর্তমানে শিশু শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে নির্দিষ্ট নিয়মাবিধি মেনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রাত্যহিক মিড-ডে মিল সহ শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা। 

৩)দূরত্ব অনুযায়ী স্বচ্ছ ভাবে দ্রুত শিক্ষকদের ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করা। 

৪)NIOS এ NC সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যার অতি দ্রুত সমাধান করা। 

৫)প্রধান শিক্ষক পদটির যথাযত সম্মান দিয়ে উপযুক্ত সাম্মানিকের ব্যবস্থা করা। 

৬)সরকারের অর্ডার মোতাবেক B.Ed. করা শিক্ষকদের ছয় মাসের ট্রেনিং থাকা সত্ত্বেও কেন 'A' ক্যাটাগরি স্কেল দেওয়া হচ্ছেনা তার জবাব দেওয়া এবং উক্ত সমস্যার সমাধান করা। 

সদ্য নিযুক্ত সভাপতির সঙগে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান "UUPTWA বা 'উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন' একটি গতিশীল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন। বইতে থাকা নদীর ধারায় ভালো মন্দ অনেক কিছুই ভেসে চলে, চলমান এই গতিশীলতায় একুল ভেঙে ওকুল গড়তে থাকে। সুতরাং বিঘ্ন-বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলতে হয় আ মাদের সবাইকে"। 

পৃথা বিশ্বাসের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান "পৃথা বিশ্বাস হলো একটা আগুনের নাম, যারা কাছ থেকে দেখেছেন তারা জানেন যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতেও সুন্দর ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে সবাইকে উজ্জীবিত রাখেন। অত্যন্ত কঠিন অসম লড়াই পৃথাদির মত মানুষেরা করতে পারেন কেননা ওনার মধ্যে আছে কঠিন পণ আ র আ ত্মত্যাগ করার দৃঢ প্রত্যয়। তবে তিনি আ শা করেন দ্রুত সুস্থ হয়ে তিনি তাদের মধ্যে ফিরে আ সবেন ও আ ন্দোলনের হাল ধরবেন। 

অতি অল্প সময়ে তিনি সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাসের সাথে এবং লক্ষ লক্ষ শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে জোর ধাক্কা দিয়েছেন অতীত থেকে চলে আসা একটা ভুল নিয়মের বিরুদ্ধে। বর্তমানে নতুন কিছু সমস্যার দরুন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও তিনি কোনো সদুত্তর পাননি।বিগত দিনের ন্যায় সকলেই নিজের নিজের অধিকার বুঝে নিতে উপরিউক্ত দাবিগুলি নিজ নিজ জেলায় জেলা আধিকারিকদের ডেপুটেশন দেবেন। এই ডেপুটেশন আগামী জানুয়ারী মাসের ৪ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এর পরবর্তী সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে আমরা সমস্যাগুলির সমাধান আশা করব। অন্যথায় তাদের লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকবে। 

নব নিযুক্ত সম্পাদক ভাস্কর বাবুর সঙগে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান "দীর্ঘ একবছর অতিক্রান্ত অথচ সরকার পূর্বের G.O এর কোন সঠিক ক্লারিফিকেশন দিতে পারেননি ফলে প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের বৃহত্তর অংশ মারাত্মক ভাবে আ র্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছেন। আমরা এই ব্যাপারে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে ও মাননীয়া মুখ‍্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েও কোনো সদুত্তর পাইনি। আর কত দিন অপেক্ষা করবে শিক্ষক সমাজ, আর কতটা বঞ্চিত হবেন তাঁরা? আর না! সময় হয়েছে, এ রাজ‍্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের সমস্ত বিভেদ ভুলে আরও একবার গর্জে ওঠার। আসুন নিজেদের অধিকার বুঝে নিই। আর দীর্ঘ লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে চলেছে এ রাজ‍্যের প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের শিশুরা। তাঁরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। মিড ডে মিল বন্ধ থাকায় অপুষ্টিতে ভুগছে গরিব ঘরের শিশুরা। তাদের অধিকারও ফিরিয়ে দিতে হবে। এ দায়িত্ব সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এই সমস্ত বঞ্চনার বিরুদ্ধে বা সঠিক অর্থে বলতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষা-শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমাদের সংগঠন আগামী দিনে লড়াই করবে"।

Post a Comment